গতকালকের পোস্টে J Vai ব্যাপার টা নিয়ে জানতে চাইছিলেন, আমি খুব সহজে বুঝানোর চেষ্টা করবো, দেখেন বোঝেন কিনা।
মেন্টাল হেলথঃ
একটা সময় আমাদের দাদাদের আমলে এটেনশন টাইম নির্দিষ্ট ছিলো না। তারা হয়তো মাসে ছমাসে একবার হলে যেয়ে সিনেমা দেখতেন, রেডিওতে গান শুনতেন। তাদের দিনের বেশীরভাগ সময় কাজ করতে হইতো। সেই সময় টায় এটেনশন স্প্যান নিয়ে কোন প্রবলেম ই ছিলো না।
আমাদের বাবাদের যুগে টিভি আসলো। টিভিতে সপ্তাহে একদিন সিনেমা দেখতে পারতেন তারা। স্পেশালী শুক্রবার, দুপুর থেকে সিনেমা, সন্ধ্যায় আলিফ লায়লা ধরনের কোন প্রোগ্রাম। এইযে সিনেমাগুলো, এগুলো আরাই থেকে ৩ ঘন্টা হইতো। সিনেমার থেকেও বেশী এক্সেসেবল ছিলো বই। একটা বই পড়তে একদিন তো বা একটা ব্যালা পুরোটা লাগতোই, তাই না?
তারপর আমরা পাইলাম ইন্টারনেট, টরেন্টঃ দুনিয়ার সব মুভি আমাদের হাতের নাগালে। বই পড়া গেলো কমে, স্টিল আমরা সিনেমা দেখতেছিলাম, ৯০ থেকে ১২০ মিনিটের মুভি। অর্থাৎ আমার কমন এটেনশন স্প্যান ওভাবে গড়ে উঠছে, আমি একটা সাজজেক্টে বা টপিকে ১২০ মিনিট মনযোগ রাখতে পারি, আমার ব্রেইন সেভাবেই ট্রেইন হইছে। সো স্কুল বা কলেজে যেয়ে ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটের ক্লাস করার সময় মনযোগ ধরে রাখতে কোন প্রবলেম ই হয় নি।
এরপর এলো ইউটিউব। নিজেদের এড থেকে আয়ের স্বার্থেই ইউটিউবার রা চেষ্টা করেন ভিডিও ১০ মিনিটের মত বানাইতে। এতে করে ১ টায় যায়গায় ২/৩ টা এড দেখানো যায়। এপর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। ইউটিউব সুধু ইন্টারটেইনমেন্ট না, এডুকেশনাল কাজেও আজকে পর্যন্ত ইউজ করি আমরা সবাই, তাই না? কোন টিউটোরিয়াল, হাও টু, কোন স্পেসিফিক বিষয়ে জানতে ব্লগ পড়া থেকেও ভিডিও মাধ্যম টা বেশ জনপ্রিয়।
আসলো টিকটক। যেখানে প্লাটফর্ম টার এলগরিদম এমন ভাবে ডিজাইন করা, যে ভিডিও হবে ১৫ কি ৩০ সেকেন্ডের, একটা ভিডিও এর পরের ভিডিও টা সেইম টপিকে হবে না, কিছুক্ষন পর পর ভিডিও এর টপিক চেঞ্জ হতেই থাকবে, আপনাকে ঐখানে আটকায় রাখা। এখন টিকটকের ফান্ডামেন্টাল সমস্যা ৩ টাঃ
১। ৩০ সেকেন্ডে আপনাকে কিছুই শেখানো সম্ভব না, সো এই প্লাটফর্ম টা পুরাপুরি আনন্দের জন্য।
২। এখানে প্রতি মিনিটে টপিক চেঞ্জ হবার কারনে আপনার ব্রেইন স্থির হতে পারতেছে না। কয়েক সেকেন্ড পর পর একটার পর একটা করে নতুন টপিক।
৩। নানারকম ফিল্টার, নানারকম ট্রেন্ডিং সাউন্ড, পুরো ব্যাপার টা একেবারেই ফেইক।
এতে আপনার কি ক্ষতি হচ্ছে?
এটেনশন স্প্যান, অর্থাৎ আপনি মনযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা হারায় ফেলতেছেন। উপরে বললাম না যে আমাদের এটেনশন স্প্যান ১২০ মিনিট, আপনি এইরকম শর্ট ভিডিও দেখতে থাকলে আপনার এটেনশন স্প্যান ৩০ সেকেন্ডে নেমে আসবে। তো ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ডের উপরে কোন বিষয়ে আপনি মনযোগ রাখতে পারতেছেন না, ৪০ মিনিটের ক্লাস আপনার ভালো লাগবে? সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুল বা কলেজে থাকতে ভালো লাগবে? যদি ভালো না লাগে, তাহলে শিখবেন কিভাবে?
ক্লাস টাইম জাস্ট ইশ্যূ না, আপনি হয়তো পড়তে বসছেন, এই পড়তে বসলেও আপনার বই টার উপর বা লেকচার টার উপর বেশীক্ষন মনযোগ ই থাকবে না, কারন আপনার ব্রেইন ট্রেনিং পাইতেছে ঐ ৩০ সেকেন্ড আগ্রহ রাখার। ফলাফল আপনার পড়াশুনার মান, রেজাল্ট সবকিছুর আকাশ ভরা তারা হয়ে যাবে। এন্ড যে লোক টা ৩০ সেকেন্ড ধৈর্য রাখতে পারে, এর বেশী পারে না, আপনারে দিয়ে ৫ বছরে একটা কম্পানী দাড় করানো বা ৯-৫ জব করানো বা একটা প্রজেক্টে ৩ মাস লাগিয়ে রাখা যাবে? সম্ভব থিওরিটিক্যালী?
সো, এই টিকটক এর শর্ট ভিডিও জনপ্রিয়তা দেখে অন্য প্লাটফর্ম গুলো যেমন ফেসবুক রিলস, ইউটিউব শর্টস আনতে বাধ্য হইলো, নাহলে মানুষ পুরোপুরি টিকটকে চলে যাইতো। কিন্তু এতে করে কম্পানীগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একটা ইউটিউব বা ফেসবুক ভিডিওতে আপনাকে বিজ্ঞাপন দেখানো সম্ভব, স্কিপ করার আগেও হয়তো ১৫ সেকেন্ড বিজ্ঞাপন দেখানো সম্ভব, বাট এই শর্টস ফরমেটে স্লাইড করে পরের ভিডিওতে চলে যাবেন, তাহলে এই কম্পানীগুলোর ও ফাইনানশিয়াল লস এই শর্ট ভিডিও ফরমেট টা।
টিকটকের পেছনে সরাসরি চাইনিজ সরকারের ফান্ডিং আছে। মজার বিষয় চীনে টিকটকের যেই ভার্শন টা চলে, সেইখানে ভিডিওগুলো এডুকেশনাল, বা রাষ্ট্রের প্রোপাগান্ডা, আবার লিমিট করা, একজন মানুষ সম্ভবত ম্যাক্সিমাম ৪০ মিনিট দেখতে পারেন। অন্যদিকে এই চাইনিজ সরকারের টাকায় চলা বাইটড্যান্স পুরা পৃথিবীর একটা জেনারেশন রে মেন্টালী সিক, কাজের জন্য অযোগ্য, শর্ট ভিডিও কন্টেন্টে এডিক্টেড বানায় ফেলছে চিপা দিয়া। গুড ফর চায়না, পুরা দুনিয়ার একটা পুরো জেনারেশনের জন্য আকাশ ভরা তারা।
তো, দিনশেষে আপনি এই ফরমেটে ভিডিও দেখে দেখে এডিক্টেড হয়ে গেলে ( যাবেন ই, এলগরিদম গুলো ভয়াবহ ভাবে ডিজাইন করা ) আপনার নিজের জীবন থেকে সময়, মেধা, ব্রেইনের ক্ষমতা, অন্য কিছু থেকে আনন্দ নেয়ার ক্ষমতা সবকিছু হারাচ্ছেন। দেশের ফিউচার জেনারেশন একটা জোম্বি জেনারেশন হয়ে যাচ্ছে, যারা ৫ বছর পর কমপ্লেইন করবে তাদের কেউ কাজ দেয় না, চাকরী দেয় না, তারা বিজনেস করতে পারতেছে না। সো সরকারের লস, দেশের লস, আপনার পরিবারের আপনার পিছনে ইনভেস্ট করা পুরাটাই লস। এইগুলো থেকে লাভের লাভ কিচ্ছুই নাই, এবসুলুট জিরো।
ফোনে টিকটক থেকে থাকলে আনইন্সটল করে দেন। ফেসবুক, ইউটিউব এ এগুলার উপরে টাচ কইরেন না। অভ্যাস করেন লং টাইম ভিডিও দেখার, যেগুলো থেকে হয় প্রপার ইন্টারটেইনমেন্ট পাবেন, হইতে পারে ভালো একটা মুভি, অথবা এডুকেশনাল কন্টেন্ট, সেইটা যেই সাবজেক্টেই হোক। আমি গত মাসখানেক ধরে জেম স্টোন নিয়ে দুনিয়ার সব ভিডিও দেখতেছি কারেন্ট না থাকলে বা কফি ব্রেকে। কোন রত্ন পাথর কই পাওয়া যায়, এগুলার গ্রেডিং কেমনে করে, কেমনে কাটে, পালিশ করে এইসব। আজাইরা জ্ঞ্যান, কোন কাজেই লাগবে না, কিন্তু এগুলা জ্ঞ্যান, কোন না কোন ভাবে এগুলো আমার নিজের স্কিল রে শার্প করতে মোটিভেট করতেছে। একটা নোংরা মাটির থেকে তোলা পাথর রে হাতে এত সুন্দর ভাবে শেইপ দেওয়া যায়, আর আমি কোড লিখে একটা ওয়েব প্রজেক্ট বানাবো, তাতে ক্ষুত থাকবে, মানা যায়?