সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল একটা পোস্ট দেখলাম, আইফোন নাকি ১২ হাজার টাকায় তৈরী করে এপল দের লাখে বিক্রি করে। ব্যাপার টা ম্যাজিক কফি খেয়ে ৬ ইঞ্চি উচ্চতা বাড়ানো যায় বিশ্বাস করা বাংগালী বিশ্বাস ও করে ধুমছে শেয়ার দিতেছে।
কদিন আগে নাথিং এর সি ই ও একটা ব্রেকডাউন দিয়েছিলেন একটা ফ্লাগশীপ তৈরীতে পার্টস কিনে লাগাইতে কত খরচ হয় সেটার, ৫০০ ডলারের মত ছিলো খুব সম্ভবত। সেটাও জোড়াতালীর একটা প্রটোটাইপ ফোন হবে, ফিনিশড প্রডাক্ট না।
এপল পাবলিক কম্পানী, একটু ঘাটলেই পেয়ে যাবেন এপলের নেট প্রফিট মার্জিন ২৫%। অনেক চাইনিজ ফোনের প্রফিট মার্জিন এর থেকে বেশী। তাহলে যদি ধরেও নেই যে চারশো ডলার ওদের পার্টস এন্ড প্রডাকশন খরচ, বাকি টাকা খরচ হয় কোথায়?
১। পার্টস আপনিও কিনতে পারবেন চায়না থেকে। একদম সিলড ফিনিশড করে লাগাতে মানুষ প্রয়োজন, এটা যদি চাইনিজ ফক্সকনের ফ্যাক্টরীতে অতি অল্প খরচেও করতে যান, কাউকে তো পে করতে হবে?
২। এবার কল্পনা করুন দুনিয়ার সেরা মাথাগুলো, এবসুলুট সেরা মাথাগুলোকে এপল তার ক্যালিফোর্নিয়া হেড কোয়ার্টারে বসিয়ে রাখে। বসিয়ে রাখে ভুল লিখলাম, কাজ করায়। সেটা প্রডাক্ট ডিজাইন থেকে শুরু করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রাও। সুধুমাত্র এপলের হেড কোয়ার্টারেই ১২ হাজার স্টাফ কাজ করেন বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এ। এনাদের স্যালারী বছরে মাথাপিছু দের লাখ ডলার এভারেজ। টেক এ একদম এন্ট্রি স্যালারী $76,000 আর প্রমোশন পেতে পেতে এটা ৯ লাখ ডলার পর্যন্ত হয়। পদের আগে চিফ লাগলে সঠিক নাম্বার জানি না, দেখা লাগবে।
৩। এপল স্টোরসঃ দুনিয়া জুড়ে যে শোরুম গুলো, সেগুলোতে সুধু সেলস স্টাফ রাখলে চলবে? সাপোর্ট স্টাফ? ফোন নষ্ট হলে সার্ভিসিং দিতে হবে তো? এই মুহুর্তে পৃথিবীতে ৫৩৫ টা এপল স্টোর আছে। একটা দোকান মানে সুধু দোকান না, সেই দোকানের মেইনটেনেন্স, ঝাড়ু দেয়া, পরিষ্কার রাখা থেকে শুরু করে সব কাজের জন্য মানুষ প্রয়োজন না?
৪। মার্কেটিংঃ ভয়াবহ ব্যাপার এইটা এপলের মত ব্র্যান্ডের জন্য। এপল ডিরেক্ট মার্কেটিং করে না আমেরিকা আর ইউরোপের বাইরে তেমন, কোথাও বিলবোর্ড বা ব্যানার দেখবেন না। তাহলে মার্কেটিং করে কিভাবে? এইবার মনে করেন তো, গত ১০-১৫ বছরে যত সিনেমা দেখেছেন, হলিউড হোক, বলিউড হোক, সব তারকাদের হাতে কি ফোন ছিলো? স্ক্রিনে দেখা কিছুই মাগনা না, সেইটা কোন স্টার কোল্ড ড্রিংক্স কি খাচ্ছেন থেকে শুরু করে কি বাইক বা গাড়ি চালাচ্ছেন, সবকিছুই পেইড প্রমোশন।
জী, এসব খরচ করার পর ১০০০ ডলারের আইফোন টা বিক্রি করলে এপল ২৫০ ডলার প্রফিট করে। এইখানেও বাট আছে, আপনি কেনার পর ৭-৮ বছর এপল সেটার পার্টস রেডি রাখে নষ্ট হলেই বদলে দেয়ার জন্য, সফটওয়্যার আপডেট দিতে থাকে। আমার ওয়াইফ সেকেন্ড ফোন হিসেবে আইফোন XS ব্যাবহার করে ২০১৮ সালের মডেল, এখন পর্যন্ত লেটেস্ট সফটওয়্যার আপডেট টা পাচ্ছে।
আর আপনি ৩ হাজার টাকার যে জিনসের প্যান্ট টা পড়ে আছেন, ওটা একদম সর্বোচ্চ কোয়ালিটিতে তৈরী হয়ে প্যাকেট হয়ে যাওয়া পর্যন্ত খরচ ৬০০ টাকা পার করা সম্ভব না বাংলাদেশে।
এপলের কোয়ালিটি নিয়ে কথা বইলেন না। আইফোন ৫ এখনো দেখি মানুষের হাতে, কেনাবেচা হয় বিক্রয় ডট কম বা ফেসবুক গ্রুপে। ২০১২ সালে রিলিজ হইছিলো, ১৩ বছর আগের একটা ডিভাইস। স্যরি, এন্ড্রয়েড এ এমন কিছু হয় না ভাই। আমাকে এপল শিপ বলেন, এপলের কাল্ট আছে বলেন, প্রবলেম নাই। কেনো, এইটা এক বছর টানা ইউজ করলেই বুঝবেন।
এই বছর ও আইফোন ১৭ এয়ার রিলিজ হবে, এন্ড পৃথিবীর সবথেকে বেশী বিক্রি হওয়া ফোন হবে এইটা আমিও জানি, আপনিও জানেন। দুনিয়ার এই সব মানুষ গুলোই আসলে বোকা, দুনিয়ার টপ ১ লাখ জন ধনী মানুষ ( গুগলের ল্যারি পেইজ ও ) সবাই ই বোকা, আপনি ই আসলে বুদ্ধিমান।