ক্যারিয়ার, কামাই এগুলান নিয়া মাথা ঘামাইলে লেখা টা পড়েন।
Life’s Not Easy.
বহুদিন আগে আমাকে ওশো বলে একজন শিক্ষক শিখাইছিলেন যে জীবন একটা ভিডিও গেম। ভিডিও গেম গুলার একটা জিনিষ কমন ( ইউবিসফটের গেম বাদ দিয়া লোল ) যে প্রতিটা লেভেল, আগের টা থেকে কঠিন। জীবন গেমেও এই নিয়ম টা খাটে, SSC পর্যন্ত একটা লেভেল, তারপর HSC লেভেল অনেক কঠিন, এরপর গ্র্যাজুয়েশন আরো কঠিন, তারপর ক্যারিয়ার, এইভাবে প্রগ্রেস হইতে থাকে, এন্ড অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই গেম খেলতেই থাকতে হবে টিকে থাকার জন্য। এখন আপনি চাইলে নাও খেলতে পারেন, সেক্ষেত্রে অন্যের দয়ার উপর ডিপেন্ড করে বাচা যায়।
দেখেন, এই আগষ্টে আমি ৩০ এ পড়বো। টেকনিক্যালী আমার ক্যারিয়ার শুরু হইছে ১৭ বছর বয়সে। এন্ড লাইফের এই স্টেজে আইসা আমি প্যারালালী ৩ টা ক্যারিয়ার মেইনটেইন করতেছি।
১। জবঃ সবাই না, বাট আমার কাছের মানুষেরা জানেন আমি একটা কনজিউমার কম্পানীতে CTO হিসেবে জব করি। এইটা ট্রেডিশনাল জবের মতই, রিমোট যদিও, বাট দায়িত্ব অনেক। একটা কম্পানীতে কি কি হার্ডওয়্যার ইউজ হবে, কি টেকনোলজি ইউজ হবে, মার্কেটিং কোন চ্যানেলে হবে, কি ল্যাংগুয়েযে হবে দিনশেষে পুরাটার দায়ভার আমার উপরে। এইখানে আমার স্যালারী/আয় ফিক্সড, অনেক বেশী না হইলেও সার্ভাইব করার মত বোনাস টোনাস মিলায়, চলতে পারবো লেটস সে। বাট এইখানে গ্রো করার সুযোগ কম। কম্পানীটা বড় হতে থাকলে হয়তো সামনে যেয়ে স্যালারী বাড়বে, বাট এই জব টা করার পিছনে কারন আছে, বলতেছি সামনে যেয়ে।
২। বিজনেসঃ WEBSEA আমার বিজনেস। এইটা স্টার্ট আপ না, স্মল বিজনেস। আমি সেই জাপানীজ বিজনেস মাইন্ড নিয়ে এটা শুরু করছি, প্রথম সেল টা থেকেই অল্প হলেও প্রফিট করছি, কিন্তু কোয়ালিটি কন্ট্রোলে আমার খুতখুতে স্বভাব টা থেকেই গেছে। যেই কোয়ালিটি আমি নিজে ইউজ করবো না, আমি সেইটা বিক্রি করবো না, সিম্পল মাইন্ডসেট। এইখানে স্টার্ট আপ মডেলে গিয়ে ক্যাশবার্ন করতে থাকলে, মার্কেটিং করলে যে গ্রোথ টা হইতো, সেইটার ১০০ ভাগের ১ ভাগ ও হয় নাই, কিন্তু স্মল বিজনেস মডেলের কারনে ২ টা জিনিষ হইছে। আমার প্র্যাকটিক্যালী কোনদিন ই লস হয় নাই, ১ ডলার হলেও প্রফিট ছিলো মাসে, আর ক্যাশ বার্ন করে লসে চলতে চলতে একদিন যেয়ে বিক্রি করে দিতে হবে এমন অবস্থায় পড়ি নাই, পড়ার সম্ভাবনা নাই, বিকজ ইনপুট যেহেতু খুবি কন্ট্রোলড, আউটপুট বেশ ভালো রকম প্রেডিক্টেবল।
৩। ফ্রিল্যান্সারঃ এটা দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু, রাইট? আমার প্রথম ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট ডিজাইন টা ছিলো একটা লোকাল বিজনেস ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের। ফ্রিল্যান্স কাজ টা আমার আজকে পর্যন্ত সবথেকে ফেভারিট কাজ। বাট আমরা যারা শুরুর দিক থেকে ছিলাম, জানতাম এইটা করেই জীবন চলবে না, সো অন্যান্য দিকেও সময় দিছি। আমি আজকেও ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করি, গতকালকেও একটা জুতোর ব্র্যান্ডের ফাউন্ডারের সাথে কথা হলো, মেবি সামনের মাসে সেটার ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং এ হাত দিব। কাজ টা মজার, একটা ব্র্যান্ডের হয়তো একটা বা কয়েকটা শোরুম আছে, তারা অনলাইনে আসতে চাইতেছে। তাদের ব্র্যান্ডের কালার, লোগো, স্লোগান থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করে দেয়া, ম্যানপাওয়ার লাগলে তাদের ট্রেইন করা, মানে এ টু যেড একটা গাইডলাইন দেওয়া।
এইটা আমারে কোন কোর্স, ক্যাম্পাস শেখায় নাই। পিওর এক্সপেরিয়েন্স। এতবছর নেটে আছি, কোনটা পাবলিকে খায়, এইটুকু শিখছি, কাজে লাগাইতেছি।
তো, প্রপার একটা ক্যারিয়ার হইতে পারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনঃ
১। ইন্টার পর্যন্ত ভালো একটা রেজাল্ট যোগার করে ফেলতে হবে। এই সময় জাস্ট প্যাশন হিসেবে বেসিক স্কিল যেমন ইংলিশ এ ভালো কথা বলতে পারা, কিবোর্ডে না দেখে টাইপ করা এগুলা শিখে ফেলা লাগবে। অনেক মোটিভেশনাল স্পিকার আপনাদের বলেন স্কুল, স্টাডি স্ক্যাম। ভাই, বাংলা সেকেন্ড পেপারের মত আজাইরা সাবজেক্ট না পড়লে আপনি আমার এই লেখা পইরা বুঝতেন না, আমার লেখায় প্রাঞ্জলতা বলে যে ব্যাপার টা আছে, সেইটাই আসতো না। সো ইয়েস, সাহিত্যচর্চা ফিউচারে কমিউনিকেশন স্কিলে বিশাল কাজে দেয়, নাহলে আজকে আমার লেখা পড়ে মনে হইতো গুগল ট্রান্সলেট মারছে হ্লায়।
২। ইন্টারের পর ভার্সিটিতে জয়েন করার সাথে সাথেই পার্টটাইম একটা জবে ঢুকে পড়তে হবে। এইখানে যে ৪ বছর জব টা করবেন, হইতে পারে একদম মিনিমাম ওয়েজে, নাম মাত্র স্যালারীতে, বাট এইযে সিভিতে ৪ বছরের ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স টা এড হইলো, এইটার ভ্যালু অপরিসীম। এন্ট্রি লেভেলের জব গুলাতেও ৩-৫ বছর এক্সপেরিয়েন্স যখন চাওয়া হইতেছে প্রায় সব সেক্টরেই, তখন আপনার এই ৪ বছর একটা কাজ করাটা যেকোন HR এর কাছে বড়সর পজিটিভ সাইন।
৩। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর আপনি ডিসাইড করেন ১০ বছর পর কি নিয়া বিজনেস করবেন। ধরা যাক আপনি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে আসবেন, তাহলে অলরেডি চালু একটা ফ্যাশন ব্র্যান্ডে ঢুকে পড়েন। সেইখানে ৫-১০ বছর জব করেন। এইযে ফ্রন্টে দারায় কাস্টমারের সাথে কমিউনিকেশন করা, ধরেন একটা ফ্যাশন হাউজ। সেইখানে এই ১০ বছর একেবারে কাস্টমারের সাথে সরাসরি কথাবলা, প্রডাক্ট সম্পর্কে প্র্যাকটিক্যালী জানা, মার্কেট বোঝা, কম্পিটিটর বোঝা যেভাবে শিখবেন সেইটা পৃথিবীর কোন ভার্সিটি আপনারে শেখাইতে পারবে না। সম্ভব না।
শিখছেন? এখন যেয়ে আপনার কনফিডেন্স আসবে বিজনেসে নামার। আপনি কাস্টমার কি চায় জানেন, প্রডাক্ট কেমন হয়, দাম কেমন হয়, কি দামে বিক্রি হয় সব জেনে ফেলছেন ভাই ১০ বছর এই লাইনে চাকরী করে। সো আপনার বিজনেসে সাকসেসফুল হবার চান্স একজন ফ্রেশার থেকে ১০ গুন বেশি। জাস্ট বিকজ আপনি প্র্যাকটিক্যালী জানেন।
আমি ওয়াচ ইনথুসিয়াস্ট, রাইট? আমার তো ইচ্ছা আছে আমি দেশে প্রপার দামে অসাধারন সব জেনুইন ঘড়ি দিব মানুষ রে। বাট আমার ট্রেনিং এর দরকার আছে তো, দ্যাটস হোয়াই আমি একটা ডিরেক্ট কনজিউমার ব্র্যান্ডে জব করি। এইদিক দিয়ে আমার নিজের ট্রেনিং হচ্ছে, এক্সপেরিয়েন্স হচ্ছে, অন্যদিকে আমার কম্পানী খুব স্লোলী আমার জন্য একটা ফান্ড ক্রিয়েট করতেছে। আমার কথা অনেকে বিশ্বাস করবে না, বাট আমি এখন শুরু করলে আগামীকাল রাতের মধ্যে ফুল একটা ঘড়ির ওয়েবসাইট লাইভ করে ফেলতে পারবো, পড়শুদিন সারাদিন কয়েকটা মিটিং ডেলিভারী, প্যাকেজিং পার্টনার দের সাথে এন্ড ৩ নাম্বার দিন দেশের সেরা মার্কেটার আমার ঘড়ির বিজ্ঞাপন আপনার ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের ওয়ালে দেখানো শুরু করে দিবে।
করতেছি না কেন? কারন CORE নামে একবার শুরু করে আমি ধরা খাইছি বড়সর, এক্সপেরিয়েন্স ছিলো না, মার্কেট বুঝতাম না, ভাইরে আমার পছন্দে মানুষ কিনে না, মানুষ তাদের পছন্দে, তাদের বাজেটে কিনে এই জিনিষটাই আমার জানা ছিলো না ২০১৮ তে CORE শুরু করার সময়। ফাইনানশিয়াল লস ছিলো, বাট সেইটারে আমার একটা এডুকেশনের ফি ধইরা নিছি, শিক্ষাটা দরকার ছিলো।
শিখছি, শিখতেছি। ২০২৭ পর্যন্ত চাকরী, ফ্রিল্যান্সিং করবো, তারপর যেয়ে আমি কনজিউমার মার্কেটে গ্র্যান্ড এন্ট্রি নিব। আমি ঠকে শিখছি, আপনি অতি রেয়ার অল্প কিছু মানুষদের একজন যে এতবড় এই লেখাটা পড়ছে, আপনারে আমি ফুল ব্লু প্রিন্ট টা দিয়া দিলাম মাগনা ম্যান। লাইক দেন, সাবস্ক্রাইব করেন, কমেন্ট করেন ইউটিউবার দের মত সেগুলাও চাই নাই। আমার সিম্পলী ভয় আমার নেক্সট জেনারেশন টা পর্ন, ড্রাগস, সোশাল মিডিয়া এডিকশনে শেষ হয়ে যাইতেছে। আমার ব্লুপ্রিন্ট ফলো করেন, AI আসুক, কি হোয়াটেভার, আপনার ক্যারিয়ার স্ট্রং থাকবে, টিকে থাকবেন, গ্যারান্টি।